ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এমআরটি লাইন-৫ঃ নর্দার্ন রুট
প্রকল্প সম্পর্কিত তথ্য
পটভূমিঃ

২০১১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী ৮৯,০৬,০৩৯ জন জনসংখ্যার শহর ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে অভ্যন্তরীন ও আন্তঃনগর সংযোগসহ একটি আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা অপরিহার্য। ঢাকা শহরের বর্তমান পরিবহন ব্যবস্থায় যানজট, পরিবেশ দূষণ, দূর্ঘটনা একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বিশাল সংখ্যক যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক যানবাহন ঢাকা শহরের রাস্তায় পরিলক্ষিত হয়। গত কয়েক দশক ধরে এ ধরণের যানবাহনের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এই শহরটিতে অব্যাহত যানবাহনের চাপ মোকাবেলায় এবং সুষ্ঠু অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনায় আধুনিক গণপরিবহনের ব্যবস্থা করা অত্যাবশ্যক।

প্রকল্পের বিস্তারিত বিবরণঃ

যানজট নিরসন এবং পরিবেশ দূষণ কমাতে ঢাকা ও এর আশেপাশের এলাকায় ৬টি মেট্রোরেল লাইন নির্মিত হবে। এই লাইনগুলি একত্রে ১২৮.৭৪ কিলোমিটার মেট্রোরেল নেটওয়ার্ক তৈরী করবে যেখানে ১০৪টি ষ্টেশন থাকবে, তন্মধ্যে ৫১টি উড়াল এবং ৫৩টি পাতাল। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানী লিমিটেড (DMTCL) এই প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা। DMTCL এমআরটি লাইন-৫ঃ নর্দার্ন রুট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সাধারন পরামর্শক ও পরিষেবার উদ্দেশ্যে মেট্রো ফাইভ কনসালট্যান্টস অ্যাসোসিয়েশন (MFCA) -এর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৫ঃ নর্দার্ন রুট, যা ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে। এই লাইনে হেমায়েতপুর থেকে আমিন বাজার ও নতুন বাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত ৬.৫ কিলোমিটার উড়াল অংশ এবং গাবতলি থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ১৩.৫ কিলোমিটার পাতাল লাইন র্নিমানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। লাইনটি হেমায়েতপুর, বালিয়ারপুর, বিলামালিয়া, আমিনবাজার, গাবতলী, দারুসসালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, মিরপুর-১৪, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২, নতুন বাজার ও ভাটারাসহ ১৪টি ষ্টেশনের সমন্বয়ে তৈরী হবে। এমআরটি লাইন-৫ঃ নর্দার্ন রুট মিরপুর-১০ এ এমআরটি লাইন-৬ এবং নতুন বাজারে এমআরটি লাইন-১ এর সাথে সংযোগ স্থাপন করবে।

উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনঃ

প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল ঢাকা শহরের যানজট নিরসন এবং দ্রুত যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নগর পরিবেশের উন্নতিতে অবদান রাখা।

ব্যবসার প্রসার এবং তাৎপর্যঃ

ঢাকা বাংলাদেশের রাজধানী এবং শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে অতিরিক্ত যানজট এবং বিকল্প গণপরিবহন নেটওয়ার্কের অভাব মোকাবেলার জন্য পরিবহন সেক্টরের আশু উন্নয়ন প্রয়োজন। ২০১৬ সালে সরকার ঢাকার জন্য একটি নগর পরিবহন মহাপরিকল্পনা হিসাবে Revised Strategic Transport Plan (RSTP) প্রণয়ন করে। যার অর্ন্তভুক্ত রয়েছে ৬টি ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (MRT) লাইন এবং ০২ টি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (BRT) লাইন যা ঢাকা শহরকে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির সাথে দ্রুত যোগাযোগের সংযোগ স্থাপন করবে।

প্রকল্পের ব্যয় ও সুবিধাঃ

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (JICA) থেকে ২৯০ বিলিয়ন টাকা স্বল্প সুদে এবং বাংলাদেশ সরকার প্রদত্ত আনুমানিক ৪১০ বিলিয়ন টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতি ঘন্টায় প্রায় ৫৩,২০০ যাত্রী বহন করা সম্ভব হবে। হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত একমূখী ভ্রমনে সময় ব্যয় হবে মাত্র ৩০ মিনিট ৩০ সেকেন্ড যা যানজট নিরসন, পরিবেশ দূষণ রোধ , দূর্ঘটনা রোধ এবং ভ্রমণের সময় কমিয়ে দেবে।

সময়সীমাঃ

প্রকল্পটি ২০২৮ সালের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি হবে বাংলাদেশের প্রথম পূর্ব-পশ্চিম ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট করিডোর।

প্রভাব ও ফলাফলঃ

এমআরটি লাইন-৫: নর্দার্ন রুট প্রকল্প ঢাকায় একটি কার্যকর পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য অপরিহার্য এবং অগ্রাধিকারমূলক। যা পূর্ব-পশ্চিম করিডোরের মধ্যে পরিষেবা প্রদান করবে এবং উত্তর দিকের অন্যান্য এমআরটি এবং বিআরটি লাইনের সাথে ইন্টারমোডাল স্টেশনে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পটির প্রভাব ও ফলাফল JICA-এর নিম্নলিখিত নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ:

  • বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরের গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন সহ টেকসই এবং পরিবেশ-বান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা;
  • নগর উন্নয়নের জন্য একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা;
  • নারী, শিশু এবং প্রতিবন্ধী-বান্ধব ও নিরাপদ উন্নতমানের গণপরিবহন;
  • আশেপাশের অঞ্চলের জনগণের চাকুরি ও ব্যবসা বানিজ্যের জন্য উন্নত যোগাযোগের সুযোগ তৈরি করা; এবং
  • বাস্তবায়নকারী সংস্থা (DMTCL)-এর সক্ষমতা উন্নয়ন।

রিসেটেলমেন্ট একশ্যান প্ল্যান (RAP) কি এবং কেন?

RAP এর উদ্দেশ্যঃ

এমআরটি লাইন-৫ঃ নর্দার্ন রুট প্রকল্পটির ডিপো এলাকার জন্য সাভারের হেমায়েতপুরে ৪০.১৮২২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। RAP এর উদ্দেশ্য হলো ক্ষতিগ্রস্তদের জমি, অবকাঠামো, গাছপালা এবং অন্যান্য সম্পদের প্রতিস্থাপন মূল্য প্রদান এবং আয়ের উৎস ও জীবন যাত্রার মান পুনরুদ্ধার করার জন্য একটি কৌশল প্রণয়ন করে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিয়ামানুযায়ী যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। JICA-এর পরিবেশ ও সামাজিক নির্দেশিকা এপ্রিল-২০১০ অনুযায়ী RAP প্রস্তুত করা হচ্ছে।